Header Ads

ক্রাইম দুনিয়ার রোমাঞ্চকর গল্পের মুখোমুখি হতে দেখে ফেলুন "রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ ২"


আপনি কী খুনের কন্ট্রাক্ট নিতে চান? আপনাকে কাজ দেবে ঝন্টু মোটরস। কী চমকে গেলেন এমন বিজ্ঞাপনে? চমকানোর কিছু নেই। আমরা কোনো বাস্তবের ঘটনা বলছি না। আমরা ওয়েব দুনিয়া কাঁপানো একটি সিরিজের কথা বলছি। হইচইতে ঝড় তুলেছে নতুন বাংলা ওয়েব সিরিজ "রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ ২।" গত ১৩ ই মার্চ বাংলার জনপ্রিয় অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হইচইতে মুক্তি পেয়েছে এই সিরিজটি। 


"রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ ২" এর কথাই যখন উঠলো তখন এক এক করে সিরিজটির প্রতিটি দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক। প্রথমে আসা যাক ছবির গল্পে। ১৯৭৯ খ্রীস্টাব্দে মরিচঝাঁপি থেকে প্রাণ হাতে নিয়ে নদী পার করে পালিয়ে আসা একটি ছেলে যার নাম সনাতন। যার মায়ের মৃত্যু  হয় পুলিশের গুলিতে। ছেলেটি এপারে উঠে আসে কিন্তু খাবারের জ্বালাতে জ্বলে ওঠে তার পুরো শরীর। কেউ তাকে খেতে দিলোনা। তাই পেটের খিদে নিবারণের জন্য ছেলেটি শুরু করলো ক্রাইম। সে ঝন্টু মোটরসের বর্তমান ঝন্টুকে খুন করার জন্য এক গোপন জায়গায় নিয়ে আসার আদেশ পায়। কথামতো সনাতন মাথা খাঁটিয়ে ঝন্টুদাকে ঐ গোপন জায়গাতে নিয়ে আসে। সেখানে ঝন্টুদাকে মারার জন্য কতগুলো গুন্ডা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু ঝন্টুদা সকল গুন্ডাদের মেরে একদম কুপোকাত করে দেন। তিনি সনাতনের সাহস দেখে মুগ্ধ হন। 

ঝন্টুদা সনাতনকে তার নিজস্ব অরবিন্দ সেবাশ্রমে নিয়ে যান। অরবিন্দ সেবাশ্রমকে  বাইরে থেকে আশ্রম মনে হলেও অরবিন্দ সেবাশ্রমের ভেতরে রয়েছে একটি ক্রাইমের দুনিয়া। অরবিন্দ সেবাশ্রমের আড়ালে চলে ঝন্টু মোটরসের কারবারি। ছোটো ছোটো বাচ্চাদের গুলির করার প্রশিক্ষণ, পকেট কাটার প্রশিক্ষণ, চুরি করার প্রশিক্ষণ ও খুনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখানে সনাতনের বুদ্ধি বেশি থাকলেও প্রথম প্রথম বেশ কিছু কাজে সে ভয় পেতে থাকে। একদিন গুলি চালানোর প্রশিক্ষণ চলছিল সেখানে সনাতনও উপস্থিত ছিল। কিন্তু সে পারলো না গুলি চালাতে। তখন ঝন্টুদা তাকে সাহস দেয় একটি কথা বলে যে "কাউকে যখন গুলি করবি মনে করবি ওরা তোর মাকে মেরেছে।" এই একটি কথাই সাহসী করে তোলে সনাতনকে। একটু একটু করে ক্রাইমের যাবতীয় সবকিছু শিখে ফেলে৷ তবুও হঠাৎ একদিন সনাতন ঝন্টুটাকে বলে "মানুষ খুন করা মানে তো পাপ। একাজ করলে পাপ হবে।"


ঝন্টুটা সনাতনের জবাবে বলেন "কে বলেছে তুই পাপ করবি? পাপ-পূণ্য বলে এ দুনিয়াতে কিছু হয়না। তোর মাকে যারা মারলো ওরা কী পাপ করেনি? এ দুনিয়া তোদের মতো অনাথদের মেনে নেবে না পাপ না করলে।" ঝন্টুদার উৎসাহে সনাতন একটার পর একটা ক্রাইম শুরু করতে থাকে। একটি অন্ধকার দুনিয়া যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী পাল্টাতে থাকে এক একটা ঝন্টু। বর্তমান ঝন্টুটা নতুন ঝন্টুদা বানানোর জন্য একটি পরিকল্পনা করেন। যে পরিকল্পনার ভিত্তিতে সনাতন বর্তমান ঝন্টুদাকে মেরে নিজে হয়ে ওঠে ঝন্টু মোটরসের নতুন ঝন্টুদা। এরপর চলতে থাকে তার বিশাল সাম্রাজ্য বানানোর কাজ। আসতে থাকে এক একটা খুনের কন্ট্রাক্ট। ক্রাইমের দুনিয়াতে রাজত্ব চালাতে থাকে ঝন্টু মোটরস। 

শহরের নামীদামী গাড়ি চুরি করে একদিকে এগোতে থাকে ঝন্টু মোটরসের ব্যবসা অন্যদিকে খুনের ব্যবসা। যিনি খুনের জন্য কন্ট্রাক্ট নিতে আসেন তাকে ঠান্ডা মাথায় সবকিছু বুঝিয়ে খুনটা তাকে দিয়েই করানো হয়। এরপর এক একটা প্রমাণকে এমনভাবে লোপাট করা হয় যাতে পুলিশও না টের পায়। এভাবে খুনীরা এক একটা খুন করেও পুলিশের হাত থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু পুলিশের হাত থেকে পালালেও সবশেষে ঐ খুনীকে মরতে হয় ঝন্টু মোটরসের এজেন্টদের হাতে। 


ছবির গল্পে তিনটি লেয়ার রয়েছে। প্রথম তিনটি পর্বে দেখানো হয়েছে ঝন্টু মোটরসের উত্থানের কাহিনী। চতুর্থ ও পঞ্চম পর্বে রয়েছে ক্রাইম রাইটার নামের একটি গল্প। যেখানে সৌরভ মুখার্জি নামের একজন ব্যক্তি যিনি পেশায় একজন লেখক। যিনি ক্রাইম সংক্রান্ত গল্প-উপন্যাস লিখে বিখ্যাত হয়েছেন। অথচ তার স্ত্রী শর্মিষ্ঠা ও শর্মিষ্ঠার বাবা তাকে সহ্য করতে পারেননা। তার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিল অরিজিৎ নামের তৃতীয় এক ব্যক্তির। সৌরভ মুখার্জি নিজের স্ত্রীকে বাড়িতে খুন করে পালিয়ে যান। খুনটা এতোটাই নিখুঁত ভাবে করা হয় যে কেউ সৌরভকে সন্দেহই করতে পারবে না। 

পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয় যে খুনের আগে অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে শর্মিষ্ঠার শারীরিক প্রক্রিয়া হয়েছে। কাজেই তৃতীয় ব্যক্তির পাশাপাশি পুলিশ সন্দেহ করতে থাকে সৌরভকেও। সৌরভ নিজেকে বাঁচাতে তৃতীয় ব্যক্তির সন্ধান করতে থাকেন। অবশেষে জানা যায় তৃতীয় ব্যক্তি হলেন অরিজিৎ। যাকে নিজের ফ্ল্যাট থেকে ঠান্ডা মাথায় সৌরভ তাকে ভুল বুঝিয়ে জঙ্গলে নিয়ে যান। সেখানে জলের সাথে বিষ প্রক্রিয়া করে হত্যা করা হয় অরিজিৎকে। এরপর তার লাশ মাটিতে চাপা দেওয়া হয়। চারিদিকে খবর ছড়িয়ে যায় অরিজিৎ নিরুদ্দেশ। কাজেই সৌরভ মুক্তি পেল। যদিও সেই মুক্তির স্বাদ থাকলো না টিকে। ঝন্টু মোটরসের শত্রু কালো নেকড়ে গাড়িচাপা দিয়ে মেরে ফেলে সৌরভকে। এরপর কালো নেকড়ে ঝন্টুদার সাম্রাজ্য ধ্বংস করার জন্য লড়তে থাকে। তবে লড়াইতে কালো নেকড়েকে হার মানতে হয়। অবশেষে ঝন্টুদা জিতে যান। 


সিরিজটির গল্পের কথা বলতে গিয়ে অনেক ঘটনার কথা আমরা লিখিনি। কারণ ছবির গল্প অনেকটা জটিল। চোখে সর্ষে ফুল দেখানোর মতো মারপ্যাঁচে ঘোরানো হয়েছে গল্পগুলোকে। সিরিজে অসংখ্য খুনের ঘটনা রয়েছে যেগুলো না বললেও চলবে। সিরিজটির গল্প স্টেপ বাই স্টেপ বর্ণনা করা বেশ কঠিন। এককথায় বলতে গেলে "রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ ২" হলো রহস্যের বেড়াজালে সমাজের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ঠগীদের শক্তিশালী রাজত্বের গল্প। যেখানে একটার পর একটা মানুষ বেশ কিছু বছর নিজেদের বুদ্ধি প্রয়োগ করে কালীমাতার আশীর্বাদে ঝন্টুদা ছদ্মনামে বসবাস করে। 

এবার আসা যাক অভিনয়ের কথায়। সনাতন ওরফে ঝন্টুদার চরিত্রে অভিনয় করেছেন রুদ্রনীল ঘোষ। যার চরিত্রে দেখা যায় তিনি কখনো শান্ত, কখনো উন্মত্ত, কখনো অস্থির, কখনো ভয়ংকর আবার কখনো কেউটের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে ছোবল মারেন৷ গডফাদার অর্থাৎ সনাতনের আগের ঝন্টুদার চরিত্রে অভিনয় করেছেন খরাজ মুখার্জী। যার চরিত্রে সর্বদা সাহসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। যিনি শক্তিশালী পুরুষকে আসল বাঙালির বাচ্চা মনে করেন। ক্রাইম রাইটারের চরিত্রে রয়েছেন রাজদীপ গুপ্ত। যার চরিত্রের মধ্যে রয়েছে পজিটিভ ও নেগেটিভের সংমিশ্রণ। সবশেষে সকলকে ছাপিয়ে গেছে শাঁওলি চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়। কালো নেকড়ের মতো একটি দুঃসাহসিক চরিত্রে তার অভিনয় অবাক করতে পারে সকল দর্শকদের। এছাড়াও একজন পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে কৃষেন্দু দেওয়ানজিকে। 


গল্প, অভিনয়ের কথা হলো এবার চিত্রনাট্য। যেটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই৷ এককথায় ছবির চিত্রনাট্য অনবদ্য। পরিচালনার কথা পৃথকভাবে না বললেও চলে৷ কারণ "রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ ২" পরিচালনা করেছেন পরিচালক অভিরূপ ঘোষ। যার প্রথম ওয়েব সিরিজ "রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ" এমনিতেই টানটান উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল। তার পরিচালিত দুটো ছবি "কে-সেক্রেট আই" এবং "জম্বিস্থান" ইতিমধ্যেই দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। কাজেই এ সিরিজের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। পরিচালনার পাশাপাশি আবহ সংগীতের ব্যবহার অন্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে পুরো সিরিজ জুড়ে। সবকিছুকে ছাড়িয়ে আরো বেশি চমকপ্রদ সিনেমাটোগ্রাফি।

প্রথম পর্ব দেখতে শুরু করলে আপনি বুঝতেই পারবেন না কখন আপনি পুরো সিরিজটাই দেখে ফেলেছেন। ওয়েব সিরিজের মেকিং দেখলে আপনার মনে হতে পারে এটা হয়তো কোনো একটি আন্তর্জাতিকমানের ওয়েব সিরিজ। সপরিবারে দেখার মতো একটি সিরিজ হলো "রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ ২"। যে সিরিজে নেই কোনো বাজে শব্দ ও উষ্ণ দৃশ্যের রমরমা। বলা চলে এটি হলো 'শব্দ-জব্দে'র পর হইচইতে আসা জমজমাট সিরিজ। আপনার এই সিরিজটি না দেখা থাকলে চটপট দেখে ফেলতে পারেন। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments