Header Ads

ব্রিটেনের এক বীর বাঙালি যার সংবিধানে অপরাধের কোনো জায়গা নেই



নীল বসু এই নামটির সঙ্গে অনেক বাঙালি সেভাবে পরিচিত নন। অথচ এই বাঙালি ব্যক্তিটির কথা জানার পর আপনার গর্বে বুক ভরে যাবে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সন্ত্রাস দমন বিভাগের প্রধান হলেন নীল বসু। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন ব্রিটিশ বাঙালি। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে নীল বসুর কাঁধে তুলে দেওয়া হয় সন্ত্রাসদমন বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব। যার পূর্বে তিনি স্কটল্যান্ডের সন্ত্রাসদমন পুলিশের জাতীয় কো-অর্ডিনেটর ও মেট্রোপলিটন পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেপুটি কমিশনার ছিলেন।


২০১৭ সালের ৩রা জুন লন্ডন ব্রিজে একটি ভয়ার্ত সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছিল। ঐদিন রাত দশটার সময় কয়েকজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীরা ভ্যানে করে রুদ্ধশ্বাস গতিতে ব্রিজের ওপর উঠে গিয়ে পিষে মারে লন্ডনের নিরীহ মানুষদের। প্রায় একই সময়ে লন্ডন ব্রিজ পাশ্ববর্তী বারবাজার এলাকায় সন্ত্রাসবাদীরা ছুরি নিয়ে জনসাধারণের ওপর হামলা চালায়। যে ঘটনায় এগারো জন নিহত ও আটচল্লিশ জন আহত হন। এই ঘটনার পুরো তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় নীল বসুর হাতে। তিনি দায়িত্ব সহকারে তদন্ত করে সন্ত্রাসীদের হত্যার ব্যবস্থা করেন। সন্ত্রাসবাদকে তিনি প্রবলভাবে ঘৃণা করেন। সাথে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতারও তিনি ঘোর বিরোধী। 

পঞ্চাশ বছর বয়সী নীল বসুর জন্ম হয় ব্রিটেনে। তাঁর বাবা পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক। তাঁর বাবার বাড়ি ছিল কলকাতাতে। কর্মসূত্রে যিনি পাড়ি দেন ব্রিটেনে। সেখানে ওয়েলসের একজন নার্সকে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করেন। তারপর ব্রিটেনের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে স্থায়ীভাবে ব্রিটেনে বসবাস স্থাপন করেন। 

নীল বসুর গায়ের রঙ তামাটে হওয়ার জন্য তাঁকে বারবার বর্ণবিদ্বেষের স্বীকার হতে হয়েছিল। তিনি হাজার অপমান লাঞ্ছনা সহ্য করতেন শৈশব থেকেই। তবুও দুর্বলতা তাঁকে কখনো দমিয়ে রাখতে পারেনি। দুর্বলতাকে তিনি কখনো প্রশ্রয় দিতেন না। তিনি বৃহত্তর সবল মানসিকতার মানুষ। বাবা-মা পেশায় চিকিৎসক হলেও তাঁর চিকিৎসা বিষয়ে ততটা আগ্রহ ছিলনা। বাবা-মা চাইতেন তাদের সন্তান একজন মহান আইনজীবী হোক৷ কিন্তু নীল বসু নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে অনার্স সম্পূর্ণ করেছিলেন। এরপর বার্কলেস ব্যাঙ্কে ম্যানাজার শিক্ষানবিশ হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন৷ তারপর একটি ব্রিটিশ কোম্পানিতে সেলসম্যানের কাজ করেন। যদিও সেলসম্যানের চাকরি কিছুদিনের মধ্যে ছেড়েও দিয়েছিলেন। 

১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্কটল্যান্ডের মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগ দেন। 'ব্যাটারসিয়া' এলাকায় প্রথমে তিনি টহলদারির কাজ পান। কখনও সাইকেলে বা কখনও পায়ে হেঁটে তিনি সততার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করতেন। হঠাৎ করে ঝড়ের গতিতে তাঁর একটার পর একটা পদোন্নতি হতে থাকে। ২০১৩ সালে পুলিশ বাহিনীর কমান্ডার ইনচার্জ করা হয় তাঁকে। ২০১৮ তে প্রাক্তন সন্ত্রাসদমন শাখার প্রধান স্যার মাইক রাউলির অবসরের পর এই শাখার প্রধান বর্তমানে নীল বসু। 

নীল বসুর সংবিধানে অপরাধ কখনো ঠাঁই পায়না। শহরের অলিতে-গলিতে ধরে ধরে তিনি সন্ত্রাসবাদী ও অপরাধীদের হত্যা করেন। সন্ত্রাস দমনে তাঁর দল বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। তিনি অদম্য সাহস নিয়ে বীরের মতো কাজ করেন। একজন বাঙালি যিনি ভারত নয়, বাংলাদেশ নয় সূদুর ব্রিটেনের মাটিতে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। 

তিনি বলেন - "আপনি যে ধর্মেই বিশ্বাস করুন না কেন, খুব রক্ষণশীল হলেও আমি বলবো অন্য কারো ক্ষতি না করলে তাতে দোষ নেই। নিজের সব লুকিয়ে আত্তীকরণ ঘটাতে হবে, যেটা সম্ভব নয়। শিক্ষাক্ষেত্রে সকলকে সম পরিমাণ সুযোগ দিয়ে সর্বধর্মের মানুষকে সমাজে সামিল করতে হবে। আপনি সরাসরি নিজের ধর্ম পালন করবেন ও তা অন্যেরাও সম্মান করবে এবং আপনিও অন্যের ধর্মাচরণকে সম্মান করবেন, এ ভাবেই হিংসা কমানো যাবে।"

No comments