Header Ads

'নাইট' উপাধি প্রাপ্ত এ যুগের এক বঙ্গললনা



ইতিহাসে 'নাইট' দের সম্বন্ধে পড়েছেন নিশ্চয়ই। লোহার বর্মে সর্বাঙ্গ ঢাকা এক কিম্ভুতকিমাকার অবয়ব!মধ্যযুগের সেই নাইটরা এখনও আছে। বিশ্বাস হলোনা তো ? 

তবে ঐ উদ্ভট পোষাকে নয়...সম্মানে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা ও সমাজে বিশেষ অবদানের জন্য প্রতি বছর ইংল্যান্ডেশ্বরী তার জন্মদিনে এটি প্রদান করেন। পোষাকি নাম OBE বা MBE (Member of most Excellent Order of the British Empire). চলতি কথায় যাকে বলে "নাইট" উপাধি। 


এবার মনে পড়েছে নিশ্চয়ই? রবিঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগ কান্ডের পর যা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন! 

২০০৮ সালে সেই 'নাইট' আবার পেলেন এক বঙ্গললনা। নামেই বাঙালী, জন্ম কর্ম সব বিলেতে। অক্সফোর্ড থেকে ইতিহাসের স্নাতক এই কন্যার জন্ম ১৯৬৩ তে লন্ডনের শহরতলীতে। তার ঠিক দুবছর আগেই মা বাবা পাকাপাকি ভাবে চলে এসেছিলেন ইংল্যান্ডে। বড় হয়েছেন এক সাংস্কৃতিক পরিবেশে. বাবা তপন ও মা গৈরিকা দুজনেই শান্তিনিকেতনের প্রাক্তনী। টেগোরিয়ান নামে বিলেতের মাটিতে দল খুলে মঞ্চস্থ করতেন নানান রবীন্দ্র অনুষ্ঠান। 

নাটক নিয়ে মেয়েরও উৎসাহ ছিলো বরাবর তবে অভিনয় নয় লেখায়, আর প্রথম রচনাতেই বাজিমাত। ১৯৯০ তে BBC রেডিও প্রচার করলো তার লেখা Voices in the Wind, স্বদেশের জন্য নিজের ছোড়দাদুর বলিদান নিয়ে লেখা। 

নাট্যকার হিসাবে খ্যাতির শিখরে পৌঁছালেন যখন ২০০০ সালে তার লেখা নাটক "The Waiting Room" লন্ডনের The Royal National Theater এ অভিনীত হয়। শাবানা আজমি এতে অভিনয় করেছিলেন। এরও বিষয় ছিলো কালো চামড়ার মানুষদের অধিকার ফিরে পাবার লড়াই! 

তিন কন্যার জননী বিয়ে করেছেন ব্রিটিশ সাহিত্যিক ডেভিড আর্চারকে। আদ্যপান্ত রবীন্দ্রনুরাগী এই বাঙালি নাট্যকারটি হলেন তনিকা গুপ্ত। মেয়েদের নাম রেখেছেন রবিঠাকুরের কাব্যের নায়িকাদের নামে, নন্দিনী.....নীহারিকা.... মালিনী।

ওহো যার কাহিনী লিখে এতো নামডাক সেই দাদুর নামটাই তো বলা হলো না! পিতামহ ডাক্তার প্রীতিশ গুপ্তের এই ছোটভাইটিকে ১৯৩১ সালের ৭ ই জুলাই মানে আজকের ভোররাতে ইংরেজরা আলিপুর জেলে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল।

এখনও কি বলতে হবে কে ছিলেন সেই মহান বিপ্লবী? 

সকালে সেদিন এক ইংরেজি কাগজের হেডলাইন ছিলো #Dauntless_Dinesh_Dies_at_Dawn.  

প্রায় আট দশক পরে তনিকাকে নাইট উপাধি দিয়ে ইংরেজরা কি তার ছোড়দাদুর ওপর হওয়া অন্যায়ের কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করলো?? ‌

লন্ডন থেকে শ্রাবণী বসুর সংযোজন :
৮ ই ডিসেম্বর ১৯৩০, সাহেবী পোষাক পরিহিত, তিন তরুণ অফিস টাইমে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ঢোকেন..... বাকিটা ইতিহাস। বিখ্যাত সেই অলিন্দ যুদ্ধে মারা যান বিনয় ও বাদল, দীনেশ কে সুস্থ করে বন্দী করা হয় আলিপুর জেলে। ফাঁসির সাজা হবার পর জেল থেকে চিঠি লিখতেন। তনিকার ঠাকুরদা ৯২টা চিঠি রেখে দিয়েছিলেন, বাংলা আর ইংরেজিতে লেখা। সেই চিঠিগুলো দেখে আর পড়ে তনিকার বেড়ে ওঠা। চিঠিতে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লেখা নিষিদ্ধ ছিল, ১৯ বছরের তরুণ দীনেশ লিখতেন বইপত্র-উপন্যাসের কথা, রবীন্দ্রনাথ থেকে শেক্সপিয়র, তুর্গেনেভ।

ভারতের স্বাধীনতার সত্তর বছরে (২০১৭) তনিকা ঠিক করেন, তাঁর পরিবারের ইতিহাসকে নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরবেন। শেক্সপিয়রের স্মৃতিধন্য গ্লোব থিয়েটারে ‘ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিপেনডেন্স’-এ অভিনীত হচ্ছে তনিকার নাটক ‘লায়ন্স অ্যান্ড টাইগার্স’। বিনয়-বাদল-দীনেশই তিন মুখ্য চরিত্র। নাটকে ফুটে উঠেছে  অশান্ত অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে স্নিগ্ধ সংসার চিত্রও। নেহরু, সুভাষ, গান্ধী— এঁরাও আছেন, তবে নেপথ্যচরিত্রে। নাটক শেষ হয় আলিপুর জেলে দীনেশের ফাঁসি দিয়ে। নাটকে ‘লায়ন্স’ হল ব্রিটিশরা, আর ‘টাইগার্স’ ভারতীয়রা। আন্দামানের সেলুলার জেলের এক অফিসার বলেছিলেন, এ সেই জায়গা, যেখানে সিংহেরা বাঘেদের পরাস্ত করেছে। সেই উদ্ধৃতি থেকেই তনিকা নাটকের নামকরণ করেছেন। সেলুলার জেলে বন্দিদের উপর অত্যাচারের ভয়াবহতাও উঠে এসেছে নাটকে। ‌

1 comment:

  1. আজকের বাঙালী দীনেশ গুপ্তর নাম জানেওনা, তাদের কাছে সেইসব শহীদদের কোনো মূল‍্য‍ই নেই। তবে, যেহেতু এই মহিলা বৃটিশ নাগরিক এবং সফলও বটে, এঁর সম্বন্ধে এই অতি সুখপাঠ্য লেখাটি হয়তো একবার পড়তেও পারে।
    লেখাটির জন্য অশেষ কৃতজ্ঞ।

    অরবিন্দ বন্দ‍্যোপাধ্যায়

    ReplyDelete