Header Ads

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তৈরীর নেপথ্য কারিগর মানুষ টি কে ?



সে অনেকদিন আগের কথা, দেশে তখন ইংরেজ রাজত্ব। সাহেব নগরপাল ঘোষণা করলেন কলকাতার বুকে কোন কালো মানুষ দুঘোড়ার বেশি টানা গাড়িতে চড়তে পারবে না। ময়দানে নোটিশ পড়লো, Natives are not allowed to ride three or more Horse's driven cart . 


কদিন পরেই দেখা গেল শামলা চড়িয়ে এক বাঙ্গালী বাবু তিন ঘোড়ার গাড়ি চেপে রেডরোডে হাওয়া খাচ্ছে। ছুটে এলো গোরা সার্জেন্ট, হুঙ্কার দিয়ে নামতে বললো গাড়ি থেকে। বেচারা তো খেয়েই গেল দুচার থাপ্পড়। বাবুটি কিন্তু নির্বিকার, ধীরে সুস্থে নামলেন গাড়ি থেকে তারপর চোস্ত ইংরেজি তে সাহেব কে বললেন You better have a check up your eyesight. তোমাদের আইনে বলছে Three horses driven cart prohibited. আমার গাড়িতে তো দুটো ঘোড়া আর একটা ঘুড়ি মানে Mare, তাহলে বাঁধা কোথায় ? সার্জেন্ট বেচারা পালাবার পথ পায়না ! 

জন্ম ১৮৪৫-এ, বর্ধমান জেলার খন্ডঘোষ গ্রামে। অসম্ভব প্রতিভাবান মানুষটি সে আমলের এফ.এ থেকে এম.এ, কোন পরীক্ষাতেই দ্বিতীয় হননি। ১৮৬৭ সালে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে আইন পাশ করেন, লাভ করেন স্বর্ণপদক। কিছুদিন বহরমপুর কলেজে অধ্যাপনার পর চলে আসেন পুরোপুরি আইন ব্যবসায়। বিশ শতকের গোড়ার দিকে তিনি ছিলেন কিংবদন্তি তুল্য আইনজীবী। সহকারী রূপে পেয়েছেন বাংলার বাঘ আশুতোষ ও রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের মতো ব্যাক্তিত্ব কে। সেই আমলে অন্য যে কোন ব্যারিস্টারের থেকে তাঁর ফিজ ছিল কয়েক গুণ বেশি তবুও মক্কেলরা তার দরজায় ভিড় করতো। চরিত্রে ছিল অদ্ভুত বৈপরীত্য, একটাকাও ফি কমাতে রাজি হতেন না কখনো অথচ উপার্জনের বেশিটাই খরচ করতেন দানধ্যানে ও বাংলায় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে। এই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন।

যুক্ত ছিলেন ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের নরমপন্থী-চরমপন্থী বিভাজনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকার ‘অপরাধে’ সরকারি স্কুল-কলেজ থেকে বিতাড়িত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষাদানের জন্য ১৯০৬-এ গঠিত হয় ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ'। শুধু কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দিতে চেয়ে তারকনাথ পালিতের নেতৃত্বে তৈরি হল ‘কারিগরী শিক্ষা প্রসার সমিতি’।

ব্যারিস্টার সাহেব ওই দু’দলেরই সভাপতি রইলেন। দুই প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদা ভাবে স্কুল-কলেজ খুলল কিন্তু নানা কারণে সেগুলি প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম হল। পরে দুই প্রতিষ্ঠান এক করে দেবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বিশেষ ফলপ্রসূ হল না। শেষমেশ টিঁকে রইল শুধু মাত্র বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট। 

মৃত্যুর আগে উনি তাঁর প্রায় ষোল লক্ষ টাকা সম্পত্তি ওই কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানকে দান করে যান। সেই টাকাতেই ১৯২২-এ যাদবপুরে ৩৩ একর জায়গা কিনে ১৯২৪-এ বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ‘কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ নাম নিয়ে যাদবপুরে স্থানান্তরিত হল।  ১৯৫৬ সালে সেটাই পরিণত হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কৃতি ও সফল ছাত্র ছাত্রীরা জানেন কি তাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরীর নেপথ্যের মানুষ টি কে ?

দক্ষিণ কলকাতার এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হলো রাসবিহারী অ্যাভিনিউ। ১৯২৯ সালে তা জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়। রাস্তাটি গোড়ায় পরিচিত ছিল ‘মেন সয়্যর রোড’ বা বালিগঞ্জ অ্যাভিনিউ নামে। বেশিরভাগ মানুষ জানেন এটি বিপ্লবী রাসবিহারী বোসের নামাঙ্কিত! ভুল একদম ভুল।

প্রয়াত ব্যরিস্টার রাসবিহারী ঘোষের সম্মানে স্বাধীনতর পর রাস্তাটির এই নামকরণ, যিনি ছিলেন এক প্রথিতযশা আইনজীবী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তৈরীর নেপথ্য কারিগর।‌



No comments