Header Ads

গেমিং দুনিয়ার অন্যতম নাম অরিজিৎ ভট্টাচার্য



গেমিং দুনিয়ার অন্যতম নাম অরিজিৎ ভট্টাচার্য। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গেমিং সংস্থার নাম ভার্চুয়াল ইনফোকম। এই সংস্থাটি প্রধানত গেম ডেভেলপমেন্ট, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি, অ্যানিমেশন, কমিক্স ও ভিএফএক্স নিয়ে কাজ করে থাকে। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে প্রায় ৬৭০০০ টি সংস্থার জন্য কাজ করে ভার্চুয়াল ইনফোকম। বিশ্বের প্রায় ১৪৩ টি দেশে তিনি নিজের ব্যবসাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। অ্যান্ড্রয়েড, সামসাং, ব্ল্যাকবেরি, ওপেরা, অ্যামাজন, এলজি, ইন্টেল, নোকিয়া, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়ার মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের জন্য তাঁর কোম্পানি গেম বানিয়ে লঞ্চ করে থাকে৷ এর পাশাপাশি গেম ডেভেলপমেন্ট ও অ্যানিমেশন প্রশিক্ষণও প্রদান করে থাকে ভার্চুয়াল ইনফোকম। 


নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া ছেলেটা যে একদিন বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করবে একথা তার পাড়ার লোকও জানতো না। কলকাতার আগরপাড়াতে জন্ম হওয়া ছোট্ট ছেলেটার বাড়িতে দস্যিপনা লেগেই থাকতো। পড়াশোনাতে একেবারেই মন ছিলনা ছেলেটার। ক্লাসের মধ্যে পিছনের সিটে বসা ছিল তার অভ্যেস। শিক্ষকদের পড়ানোকে পাত্তাই দিতনা সে। ক্লাসে বসে আনমনে সে খাতাতে ছবি আঁকায় ব্যস্ত থাকতো। শিক্ষকেরা রেগে গিয়ে তাকে বের করে দিত ক্লাস থেকে। তার ছবি আঁকার বিষয় ছিল কার্টুন। ছেলেটা অত্যন্ত কল্পনাপ্রবণ ছিল। প্রতিদিন নিজের মতো রঙতুলি দিয়ে ছবি আঁকতে আঁকতে নিজের অজান্তেই একদা কমিক স্ট্রিপ এঁকে বসে। এরপর ছেলেটার মধ্যে কমিক্স, গ্রাফিক্স ও অ্যানিমেশন নিয়ে কিছু একটা করার ভাবনা ঢোকে। 

ছেলেটা সোদপুর হাইস্কুলে যাইহোক করে উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পার করলো৷ পড়াশোনাতে যে ছেলেটি অমনযোগী ছিল সে ছেলেটি সাফল্যের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হলো। কাজেই আর পাঁচটা ঘরের মতোই তার বাবা-মাও চেয়েছিল আমাদের ছেলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা ব্যারিস্টার হোক। কিন্তু সব ছেলেই যদি একই পেশাতে যায় তাহলে অন্যান্য পেশাগুলোর কী হবে? কে শোনে কার কথা। বাবা-মার স্বপ্নপূরণের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হলো ছেলেটি৷ বেশ কিছু মাস পার হতে না হতেই কলেজ ত্যাগ করলো ছেলেটি। ভর্তি হলো ইকোনমিক্স অনার্সে। ব্যবসার স্ট্যাটিসটিকস শেখা ছিল মূলত ছেলেটির উদ্দেশ্য। দেখতে দেখতে ইকোনমিক্সে ছেলেটি গ্র্যাজুয়েট হলো।

ইকনোমিক্সে গ্র্যাজুয়েটের পর ছেলেটা কম্পিউটারের বিভিন্ন পোগ্রামিং ও কোডিং শিখতে থাকে। কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকাকালীন ছেলেটা একদিন ভাবলো এই দুইয়ের মিশ্রণে নতুন কিছু বানাতে পারলে কেমন হয়? ব্যাস এখান থেকেই উত্তেজনা শুরু। ছেলেটি মাত্র পঞ্চাশ টাকা দিয়ে অ্যানিমেশন হাউস খুলে বসলো। আর অ্যানিমেশন হাউস মানেই মোটা টাকা ও পুঁজির প্রয়োজন। তাই উদ্যোগপতি হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রদের কোচিং করাতে শুরু করলেন। 

ছেলে ব্যবসা করছে দেখে পাড়ার লোকেরা হাসাহাসি করতে শুরু করে। তাকে ব্যবসা করতে দেখে অনেকে বলেন ছেলেটার দ্বারা কিস্সু হবেনা। পাড়ার লোকেরা তাকে নিয়ে ঠাট্টা করলেও ছেলেটির বাবা তাকে ব্যবসাতে বিপত্তি জানাননি৷ তার বাবা কেবল একটি শর্ত দিয়েছিল যে ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে উচ্চশিক্ষিত হতে হবে। বাবার আদেশ অনুযায়ী ছেলেটি এম.সি.এতে ভর্তি হলো। কলেজে পাঠরত অবস্থায় একদিন তার কলেজের প্রিন্সিপাল তাকে অনুগ্রহ করে বলেন যে ব্যবসা করা আর পড়াশোনা দুটো একসাথে চালিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টের। সে যেন কোন একটা বস্তুই মন দিয়ে করে। ছেলেটি প্রিন্সিপালের কথায় তোয়াক্কা না করে নিজের মতো করে কঠিন লড়াইতে নেমে পড়লো। 

হঠাৎ করে একদিন একটি উন্নতমানের গেম আবিষ্কার করে বসে ছেলেটি। গেমটি আবিষ্কার করলেও বিক্রি হলোনা গেমটি। বিভিন্ন সংস্থার কাছে ছুটছে গেম আর বিক্রি হচ্ছেনা। অবশেষে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কাছে যায়। তারা আবার ব্যাপারটি বুঝতে পারলো না। এই অবস্থার মধ্যে ছেলেটি ভেঙ্গে পড়লো না। আবার চেষ্টা করতে থাকে। এরপর সে রামায়ণ, মহাভারত, দেশ-বিদেশের সুপারহিরো, ফিল্ম আর্টিস্টদের নিয়ে গেম, অ্যানিমেশন বানাতে শুরু করে। দেখা গেলো ধীরে ধীরে বিক্রি হতে থাকছে গেমগুলো৷ প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতির সাথে সাথে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠতে থাকে তার সৃষ্ট গেমগুলো। এভাবেই ছেলেটি হয়ে উঠলো সফল বাঙালি ইন্টারপ্রিনার। তিনি অরিজিৎ ভট্টাচার্য। সমগ্র বাংলা ও বাঙালির গর্ব। লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে ঋণী তাঁর কাছে ।

No comments