Header Ads

গোলাপি শহরে শুভ্র বসনের তিন কাঠির খেলায় যেন এক মায়াবী সম্মোহন


২২ শে নভেম্বর ভারতীয় ক্রিকেটে লেখা হলো এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। ক্রিকেটের স্বর্গোদ্যান ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত হলো দেশের প্রথম গোলাপি বলের দিনরাতের টেস্ট।

সারা শহর ভাসছে গোলাপি রঙে। আবেগের রঙও যেন গোলাপি। ইডেনের উইকেটে সবুজের স্পর্শ।গোলাপি শহরে শুভ্র বসনের তিন কাঠির খেলায় এ এক মায়াবী সম্মোহন। আহা কলকাতা! সিটি অব জয়। দ্বিতীয় টেস্টের জন্য ৭২টি এসজি গোলাপি বল পৌঁছে যায় ইডেন গার্ডেন্সে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘণ্টা বাজিয়ে ঐতিহাসিক এই টেস্ট শুরুর ঘোষণা করলেন। তার সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তারার মেলাতে ভেসে ওঠে ইডেন। সৌরভ দাদা সত্যিই ‘দাদাগিরি’ দেখাচ্ছেন। প্রথম চারদিনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। অবিশ্বাস্য উন্মাদনা গ্রাস করেছে গোটা কলকাতাকে। গোলাপি আলোয় উদ্ভাসিত ইডেন গার্ডেনেস্ ও ক্লাব হাউস, সেজে উঠেছে এসপ্লানেড ও বহুতল বাড়িগুলো। টাটা সেন্টার সেজেছে লেসার রশ্মিতে। গোলাপি রাতের অবসানের পর খেলা শুরু হয় দুপুর ১টা থেকে।চলে রাত ৮টা পর্যন্ত।


২০১৬ সালের ১৮ ই জুলাই ভারতে প্রথম গোলাপি বলে খেলা হয়েছিল এই ইডেনেই। সিএবি সুপার লিগের ফাইনালে সেবার মোহনবাগানের সঙ্গে খেলেছিল ভবানীপুর। সেই বছর দলীপ ট্রফিও খেলা হয় এই বিশেষ বলেই। ভারতীয় দলের প্রথম সারির তিন ক্রিকেটার চেতেশ্বর পূজারা, মহম্মদ শামি ও ঋদ্ধিমান সাহাদের গোলাপি বলে অতীতে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। গোলাপি বলে খেলার অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই তারা বলেছেন যে, এই বলের সবচেয়ে বড় সমস্যা দৃশ্যমানতা। সন্ধ্যার আধো অন্ধকারে এবং রাতে ফ্লাডলাইটের আলোয় খেলতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়। তাঁদের কথাবার্তায় উঠে এসেছে লেট সুইংয়ের প্রসঙ্গও।

সাধারণত টেস্ট ক্রিকেট খেলা হয়ে থাকে লাল বলে, কিন্তু কেন এই গোলাপি বলের সংস্করণ সে নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে?

প্রথমে হলুদ এবং তারপর কমলা রং করার একটা চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু ঘাসের উপর দেখতে পাওয়ার জন্য এবং উঁচু ক্যাচ নেবার জন্য গোলাপি রংই যে সেরা সে ব্যাপারে সকলে সহমত হন। তবে ব্যাটসম্যানদের অভিযোগ পিচের রঙের সঙ্গে এ রং কখনও কখনও মিশে যায়।

বল প্রস্তুতকারী সংস্থা কোকাবুরা শুরুতে বলের সেলাইয়ের রং রাখত গাঢ় সবুজ। তারপর তারা সেলাইয়ের রং সাদা করতে শুরু করে। প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ এবং তাঁর সময়ের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অন্য খেলোয়াড়রাদের পরামর্শে সিমের রং করা হয় কালো। এই খেলোয়াড়দের বক্তব্য ছিল সিমকেও দৃশ্যমান হতে হবে।

ম্যাচের আগে জাতীয় সঙ্গীত বাজায় সেনাবাহিনীর ব্যান্ড। চা-বিরতিতে ভারতীয় দলের অধিনায়করা এবং ক্রীড়াবিদরা মাঠ ঘুরলেন। আয়োজন হয়েছে একটি টকশোর যেখানে আছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, শচীন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলে ও ভিভিএস লক্ষণ যারা বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট নিয়ে আলোচনা করছেন। যা দেখানো হয় মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ২০০০ সালে প্রথম টেস্ট খেলা প্লেয়ারদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এছাড়া অন্য ক্রীড়া জগতের দেশের মুখ উজ্জ্বল করা বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরাও আমন্ত্রণ গ্ৰহন করেন। টস করা হয় সোনার কয়েনের। যার একপিঠে লেখা ছিল " ভারতের প্রথম গোলাপী বলের টেষ্ট "। অন্যদিকে ছিল ভারত বাংলাদেশ ও সিএবির লোগো, যাতে লেখা ছিল ইডেন গার্ডেনস্ , কলকাতা এবং ম্যাচের দিন। দেওয়া হয় বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের রুপোর স্মারক কয়েন। মাঠ পরিক্রমা করে ইডেন টেস্টের দুই মাসকট পিঙ্কু ও টিঙ্কু। ছাপা হয় বিশেষ টিকিট যা প্রথমদিনের আগেই নিঃশেষিত। ছাপা হয় বিশেষ স্মারক পত্রিকা।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ২০১৫ সালে প্রথম দিন রাতের টেস্ট শুরু হয়েছিল। অ্যাডিলেড ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথমবার গোলাপি বলে দিন রাতের টেস্ট ম্যাচ খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। অজিরা সেই ম্যাচ জিতেছিল ৩ উইকেটের ব্যবধানে। ২০০৯ সালের ৫ই জুলাই অষ্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মহিলাদের মধ্যে প্রথম একদিনের ক্রিকেটে গোলাপী বলে খেলা হয়েছিল।

ক্রিকেটে গোলাপি রঙের মাহাত্ম্য আরো আছে। অষ্ট্রেলিয়ায় বৎসরের প্রথম টেস্ট ম্যাচটিকে "পিঙ্ক টেস্ট" বলে অভিহিত করা হয়। ১০ বছর আগে ২০০৯ সিডনি টেস্টে অষ্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে স্তন ক্যান্সার রোগীদের সাহায্যার্থে অষ্ট্রেলিয়া ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাকগ্রা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই ম্যাচ শুরু হয়। ম্যাকগ্রা- পত্নীর ( যার স্তন ক্যান্সারে মৃত্যু হয় ) স্মৃতি স্মরণে প্রতি বছর এই রেওয়াজ চলে আসছে। অষ্ট্রেলিয়া ও দঃ আফ্রিকার সকল ক্রিকেটাররা, অধিকাংশ দর্শকরাও গোলাপি পোশাকে উপস্থিত হয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেট দলও গত অষ্ট্রেলিয়া সফরে গোলাপি টুপি, গ্ল্যাভস ও প্যাড ব্যবহার করেছিলেন।

তথ্যসূত্র - ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস,এইসময়,উইকিপিডিয়া,সুজয় ঘোষের পোস্ট

No comments