Header Ads

বিশ্ব সংস্কৃতির তালিকায় এবার বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপূজা


পৃথিবীতে যে সমস্ত উৎসবগুলো হয় তাতে দুর্গাপূজার মতো এতো বড়ো উৎসব আর দুটো নেইবাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব হলো দুর্গাপূজাএই উৎসবকে ঘিরে বাঙালির প্রবল উত্তেজনা ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়দুর্গাপূজা বাঙালির এক ঐতিহ্যবাহী উৎসব

দুর্গাপূজাকে নিয়ে বাঙালিদের অনেক বড়ো স্বপ্ন থাকেসারা বছর ধরে সকল বাঙালি দিন গোণে দুর্গোৎসবের জন্যএ উৎসবে বাঙালিদের আবেগ চোখে পড়ার মতোবাঙালি সংস্কৃতি যে কতোটা উন্নত তার প্রমাণ দুর্গাপূজাতেই পাওয়া যায়চারিদিক থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে ভিড় করে মন্ডপ, প্রতিমা ও আলোকসজ্জা দর্শনের জন্যপ্রতিটি মানুষ মেতে ওঠে এক গভীর প্রাণের উৎসবেবিভিন্ন ধর্ম ও বিভিন্ন দেশের মানুষেরাও দুর্গাপূজা দেখার জন্য ছুটে আসেন৷  
    

এক একটা মন্ডপ বানানো হয় লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেঅসংখ্য থিমের আদলে গড়ে ওঠে শহরতলির বেশ কিছু মন্ডপপ্রতিমা নির্মাণ ও মন্ডপ নির্মাণে আর্টশিল্পী-আর্টকর্মীগণ পাকা হাতে বানানো কারুকার্যের মাধ্যমে তাঁরা তাদের দক্ষতা তুলে ধরেন

দুর্গাপূজাতে প্রতিমা, মন্ডপ দর্শন ছাড়াও বস্ত্র বিতরণ, বই-খাতা বিতরণ, রক্তদান শিবিরের মতো মহৎ সামাজিক কর্মকাণ্ডেরও আয়োজন করা হয় সামাজিক উন্নতির জন্য এছাড়াও ব্যবস্থা করা হয় অজস্র বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের গ্রামবাংলাতে আসর বসে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি, কৃষ্টিকে সঙ্গে নিয়ে সংগীতানুষ্ঠান, নাটক, যাত্রাপালা, কবিগান ও পালাকীর্তনেরসব মিলিয়ে দুর্গাপূজাতে পুরো বাঙালির জাতিসত্বাকে তুলে ধরা হয়

সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবেও সমৃদ্ধ লাভ করছে দুর্গাপূজাদেশ-বিদেশের ছোটো বড়ো   কোম্পানিও আজ এগিয়ে এসেছে  দুর্গাপূজাতে বিজ্ঞাপন  দেবার জন্যটেক্সটাইল থেকে শপিং ইন্ডাস্ট্রি সব জায়গাতেই বিশেষ লক্ষীলাভ হয় দুর্গাপূজাতে

তবুও হাজারো লোক ব্যস্ত থাকেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে দুর্গাপূজার মানে খুঁজতেকারণ দেশের মানুষ অর্থের মোহে সর্বদা আবদ্ধআমাদের সংসারে আমরা অনেক বেকাজেও অর্থকে ব্যবহার করছিকেউ মদ্যপান করে, কেউ জুয়া খেলে, কেউ শরীরের বাহ্যিক আবরণকে চকচকে করতে ব্যস্ত থাকে, কেউ আবার ভন্ড বাবাজীদের কাছে তাবিজ কেনে, নগ্নছবি দেখার জন্য ইন্টারনেটের পিছনে হাজার টাকা খরচ করে, রেস্টুরেন্টে দামী খাবার গ্রহণ করে, বারে কিংবা ডিজে পার্টিতে লাফঝাঁপ করতে যায় অথচ দুর্গাপূজার বেলায় একটা কড়িও খরচ করতে চায় নামানুষ আজ এতোটাই স্বার্থপর ও মাথামোটানিজের স্বার্থ ব্যতীত কোনো কিছুই যেন ওনারা জানেন না। সংস্কৃতি-কৃষ্টির উন্নতিতে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। 

বর্তমান সময়ে মানুষজন ঠুনকো প্রতিযোগিতায় দিন অতিক্রম করছে৷ কার ওজন বেশি, কার ওজন কম, ও কী খায়, এ কী খায়, ও কী পরে, এ কী পরে, ওর জামাটা ভালো, এর জামাটা খারাপ এসব পর চর্চা পর নিন্দা বা পিএনপিসি করেই পায়ের পর পা, হাতের ওপর হাত রেখে সময় পার করছেযেন সকলেই দায়িত্বহীনকারও কোনো বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা নেইসবই যেন এখন লুপ্তপ্রায়। 

মানবতার অবক্ষয়ের দুর্দিনে দাঁড়িয়েও বাঙালির উৎসবের প্রতি আগ্রহ একচুলও কমেনিবাঙালির উৎসবগুলোর যেভাবে আন্তর্জাতিক প্রসার ঘটছে তাতে দুর্গাপূজাও  হয়তো কোনোদিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উৎসব হয়ে যেতে পারেযদিও ওটা সম্ভব কিনা জানিনাতবে হওয়ারও সম্ভাবনা প্রবল রয়েছেসে যাইহোক বাঙালি প্রতি মুহূর্তেই তাঁর শ্রেষ্ঠ শিরোপা লাভ করে সব বিষয়েআর আগামীদিনেও সেই ধারা বজায় থাকবে


বাঙালির সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-কৃষ্টি- সাবেকিয়ানাতে ভরপুর এই দুর্গাপুজো বৃদ্ধি করতে চলেছে বাঙালির সম্মান। কারণ চলতি বছরে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেল দুর্গাপূজা২০২০ তে বিশ্ব সংস্কৃতির তালিকায় এবার পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিতে চলেছে বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজোএ উৎসব যাতে হারিয়ে না যায় সে বিষয়েও জোর দেবে ইউনেস্কোপশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিশ্ব বাংলা এবং কলকাতার ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সদস্যদের উদ্যোগে ইউনেস্কোতে পাঠানো হয় দুর্গাপূজাকেবিশ্বের সমস্ত উৎসবকে টেক্কা দিয়ে দুর্গাপুজো যেন একাই একশো

বিবিধের মাঝে মিলন মহানঐতিহ্যের স্রোতে আমরা ভাসতে গিয়ে অর্জন করছি কত শত বিশ্বসম্মানবাঙালি জাতি হিসেবে গর্ববোধ দ্বিগুণ বেড়ে চলেছে দুর্গাপুজোর মাধ্যমেআসুন দুর্গাপূজার মতো করে আমরা সকলে মিলে বাঙালির সকল উপকরণকে নতুন করে সাজিয়ে হয়ে উঠি উন্নত জাতিগোটা পৃথিবীর ইতিহাসে সমৃদ্ধশালী জাতি হিসেবে নাম উঠে আসুক বাঙালিরএতে করে আমরা গড়ে তুলতে পারব এক নতুন সোনার বাংলা     

প্রতিবেদন- সুমিত দে                                                                                                  
                   

No comments