Header Ads

প্রভাতসঙ্গীত প্রসঙ্গে --

মানবসভ্যতা আজকে এক চরম সংকটময় পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছে। কি ধর্ম, কি সংস্কৃতি,কি সঙ্গীত,কি শিল্প, কি শিক্ষা, কি অর্থনীতি ---- সর্বত্রই আজ চরম নীতিহীনতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। গোটা সমাজে দেখা দিয়েছে চরম অবক্ষয় ও বিপর্যয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক জ্ঞানী-গুনী মানুষ এসেছেন, বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ এসেছেন, অনেক সাধক সাধিকা এসেছেন, তাঁরা তাঁদের বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার জট খোলার চেষ্টা করেছেন বা কিছুটা খুলেছেনও, কিন্তু অনতিকাল পরে দেখা গেছে সমাজের সমস্যা জটিলতর হয়ে উঠেছে। সার্বিক সংকট থেকে মানবসভ্যতার উত্তরণ সম্ভব হয় নি। গত কয়েক শত বছরের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে আমরা এই জিনিসটাই গভীরভাবে উপলব্ধি করি।

বস্তুত, সমাজের বর্তমান অবস্থাটা হছে, যুগসন্ধির অবস্থা। পুরাতন ধ্যান-ধারনা বর্তমান সমাজে অচল হয়ে পড়েছে। অথচ এমন কোন একটা সামগ্রিক প্রগতিশীল সর্বানুস্যূত আদর্শ ছিল না, যা সমাজের এই সর্বাত্মক আদর্শগত শূন্যতাকে পূর্ণ করে সমাজকে নবপ্রাণে উজ্জীবিত করতে পারে ও দ্রুতগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।



ঠিক এমনি পরিস্থিতিতে দিশাহারা সমাজকে নোতুন পথের সন্ধান দিতে মহাসম্ভুতি শ্রীশ্রীআনন্দমুর্ত্তিজী যাঁর লৌকিক নাম শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের আবির্ভাব। মানবসভ্যতার বর্তমান সার্বিক সংকট মুহূর্তে ঠিক যেমনটি প্রয়োজন,      তেমনি এক সর্বানুস্যূত দর্শন তথা সর্বাত্মক আদর্শ মানব সমাজ কে উপহার দিয়েছেন, যার নাম আনন্দমার্গ ----- যাতে ধর্ম, সমাজ, শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি প্রভৃতি সমস্ত ক্ষেত্রেই সর্বপ্রকার সমস্যার সমাধানের সুস্পস্ট পথনির্দেশনা রয়েছে।



সঙ্গীত সর্বাঙ্গ সুন্দর মানব সভ্যতার জন্য অপরিহার্য অঙ্গ।  এই কারণেই এক জন ধর্ম গুরু হয়ে তিনি সঙ্গীত রচনা করলেন। জীবনের শেষ আট বছর (১৪ সেপ্টম্বর,১৯৮২ থেকে ২০ অক্টোবর,১৯৯০) বাংলা, সংস্কৃতি, হিন্দি, উর্দু, ইংরাজী, অঙ্গীকা, মৈথিলী প্রভৃতি ভাষায় ৫০১৮ টি সঙ্গীত রচনা করেন। তাঁর এই সঙ্গীত গুলি 'প্রভাতসঙ্গীত' নামে পরিচিত --- যা ভাব-ভাষা-সুর-ছন্দ সব দিক থেকেই অভিনবত্বের দাবী রাখে। 


এখানে 'প্রভাতসঙ্গীত' মনে প্রভাত কালীন সঙ্গীত নয়, অথবা প্রভাত রঞ্জন রচিত সঙ্গীত বলেই যে এই নাম তাও নয়। প্রভাতসঙ্গীত বর্তমানে সঙ্গীতের জগতে তথা সাংস্কৃতিক জগতে যে অবক্ষয়ের অমানিশা দেখা দিয়েছে ----- সেই অমানিশার অবসান ঘটিয়ে নব প্রভাতের সূচনা করেছে।

প্রভাতসঙ্গীতের বিপুল ভান্ডারে রয়েছে ---- আধ্যাত্ম চেতনা মূলক গান, নব্যমানবতাবাদের গান, আশাবাদের গান, মিষ্টিকধর্মী গান, প্রকৃতিপর্বের গান, শিবগীতি, কৃষ্ণগীতি, শিশুদের গান, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের গান প্রভৃতি বিভিন্ন ভাবের ও বিভিন্ন বিষয়ের গান। 

সুর-বৈচিত্রেও প্রভাতসঙ্গীত অভিনবত্বের দাবি রাখে। ভৈরবী, যোগিয়া, আশাবরী তোড়ি, ভীম পলশ্রী, পিলু, ইমন খাম্বার, বাগেশ্রী কফি, চন্দ্রকোষ, তিলক কামোন, কেদার, বেহাগ, মালকোষ, ছায়ানট, দরবারী কানাড়া, দেশ বাহার, জয়জয়ন্তী ইত্যাদি বিভিন্ন রাগিনীতে প্রভাতসঙ্গীত রচিত হয়েছে। এছাড়া টপ্পা, বাউল, কীর্তন, ঝুমুর, গজল, কাওয়ালী -- এসব সুরেও প্রভাতসঙ্গীত রয়েছে। আবার প্রভাতসঙ্গীতে কেবল ভারতীয় উচ্চাঙ্গ বা লোকসঙ্গীতের সুর নেই, এর সঙ্গে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশের সুরেরও সমন্বয় ঘটেছে। ভারতীয় সুরের সঙ্গে কোথাও মধ্য প্রাচ্যের সুর, কোথাও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান সুর, কোথাও আইবেরিয়ান সুর, কোথাও পার্শিয়ান সুর, কোথাও চাইনীজ সুর, কোথাও বা ইসরায়েলী সুরের মিল ঘটিয়ে গীতিকার এক অপূর্ব সুর বৈচিত্রের সমাবেশ ঘটিয়েছে।

প্রভাত সঙ্গীত প্রসঙ্গে শ্রীরামকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন ---


"প্রভাতসঙ্গীত অনুধ্যান করলে আমরা সংস্কৃতির সূর্যালোকের প্রকাশ ঘটাতে পারব আর সেই সঙ্গে শাশ্বত মুল্যবোধ, নৈতিক মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ সব কিছুর আমরা পুনর্জাগরণ ঘটাতে পারব।"


(সূত্র: সংক্ষেপে আনন্দমার্গ, নোতুন পৃথিবী প্রকাশন)
লেখায় - গৌতম মন্ডল

No comments