Header Ads

বাঙালি কেবল বাঁশ দেয় এ এক একপাক্ষিক ধারণা


দুর্গাপূজা বাঙালির জীবনে একটি অন্যতম উৎসব। এই কয়েক বছর সামাজিক মাধ্যমে কয়েকটি মজার বাঙালি গসিপ আমরা লক্ষ্য করছি তা হল-- "বুর্জ খলিফা থেকে টুইন টাওয়ার পৃথিবীর কোনো ইঞ্জিনিয়ার ভাবতেই পারেনি যে বাঙালি তা বাঁশ দিয়েই বানিয়ে দেবে।"


এই নিয়ে কয়েকটি তথ্য আলোচনা করা দরকার বলে মনে করি। কারণ কিছু হীনমন্য বাঙালি এটাকে মজার ছলে না দেখে বাঙালি বিদ্বেষ পর্যন্ত ছড়ায়। স্বজাতি-ঘৃণার এমন নিদর্শন হয়তো আর কোনো জাতি প্রর্দশন করেনা। 

বাঁশের সাথে বাস্তবেই স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটা সম্পর্ক আছে সেটা হয়তো আমরা বাঙালিরাই জানিনা। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মধ্যে টিউব স্ট্রাকচার টেকনোলজি অন্যতম। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর আইনস্টাইন বলা হয় ফজলুল রহমান খানকে। টিউবিউলার ডিজাইনের জনক বলা হয় এফ আর খানকে। পৃথিবীর সকল চল্লিশ তলার বেশি বাড়ি এই টেকনোলজিতে তৈরি হয়। এই টেকনোলজির আবিষ্কর্তা হলেন এফ আর খান। 

এফ আর খান ঢাকা শহরে পদার্পণ করার সময় বাঁশের বৃদ্ধি দেখে পরিকল্পনা করেন যদি এরকম কিছু করা যায় যাতে বহু উচ্চতম জিনিস নির্মাণ করা যায়। সেই থেকে তাঁর যাত্রা শুরু। তারপর তিনি একের পর এক বিভিন্ন টেকনোলজি যেমন টিউব স্ট্রাকচার টেকনোলজি, ফ্রেমড টিউব, স্ট্রাস টিউব, এক্স ব্রাশিং, বান্ডিল্ড টিউব, টিউব ইন টিউব, আউট ট্রিগার, বেল্ট ট্রাস, কংক্রিট টিউব স্ট্রাকচার, শিয়ার ওয়াল ফ্রেম ইন্টারেকশন সিস্টেম এর ধারণা দেন।

শিবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর যাত্রা শুরু করেছিলেন। খান এবং মার্ক ফিনটেল আবিষ্কৃত লাইফ সাইকেল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

উইলস টাওয়ার, জন হ্যানকক টাওয়ারের মতো পৃথিবীর উচ্চতম বিল্ডিং গুলো এফ আর খানের টেকনোলজিতে তৈরি। ওনার আবিষ্কার করা টিউব স্ট্রাকচারের ওপর ভিত্তি করে চিকাগোর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, ব্যাঙ্ক অফ চায়না টাওয়ার, সিটিগ্রুপ সেন্টার, ওয়ান চেস ম্যানহাটন প্লাজা, পেট্রোনাস টাওয়ার, ওয়ান শেল প্লাজা, শাংঘাই ওয়ার্ল্ড ফিনান্সিয়াল সেন্টার, ইউ এস ব্যাঙ্ক সেন্টার, ট্রাম্প টাওয়ারের মতো বিল্ডিং তৈরি হয়েছে।

ত্রিপুরায় বাঁশের বিভিন্ন বাঙালি পদ অন্যতম। বাঁশের কুটিরশিল্প ও বিভিন্ন কারুকার্য মুগ্ধ করেনা এমন মানুষ বিরল। দুর্গাপূজায় বাঙালির বাঁশের তৈরি মন্ডপসজ্জা সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। পূর্বে তৈরি বাঁশের কেল্লা, বাঁশের ভেলা এসব নিয়ে তো আর বাঙালির কম ইতিহাস জড়িয়ে নেই। 'বাঁশবাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই ' এ ধরণের কবিতাও তো আমাদের জীবনে নাড়া দেয়।

সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বাঙালি শুধু বাঁশ দিতে জানে  এই ধরণের একপাক্ষিক মন্তব্য এড়িয়ে গঠনমূলক চিন্তা যেন কমে যাচ্ছে। গঠনমূলক চিন্তা কমে যাওয়া একটা জাতির জন্য চিন্তার বিষয়। বাঙালিকে আরো সচেতন হতে হবে। নেতাজীর মতো বাঙালি বলে গেছেন "বাঙালি যেন বাঙালিই থাকে। আমাদের সমাজকে আরো সৃজনশীল হতে হবে। স্বজাতি ঘৃণা ত্যাগ করতে হবে।" 

প্রতিবেদন- অমিত দে


No comments