Header Ads

ধরা পড়লো, ফেক ডিএসপি চন্দননগরে


কিছুদিন আগের খবর, চন্দননগর স্ট্র‍্যান্ডে পুলিশের উর্দি পরে মদ্যপান রত যুবক ধরা পড়লেন, যিনি নিজেকে পুলিশের ডিএসপি বলে পরিচয় দিলেও পরে জানা যায় ভুয়ো।


এই নিয়ে প্রায় দশজন ভুয়ো পরিচয়ধারি ধরা পড়লেন এই বাংলায়; কেউ আইপিএস, কেউ আই এ এস, কেউ উকিল, কেউ স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ ইত্যাদি ইত্যাদি। ভুয়ো আইএএস দেবাঞ্জন কান্ডের পর থেকে বাংলার পুলিশ তৎপর, তাই প্রায় ১০ জন বা তারও বেশি ভুয়ো পরিচয়ধারি ধরা পড়লেন, গোটা দেশে খুঁজলে সম্ভবত এই সংখ্যা ১০০ বা তারও বেশি পাওয়া যাবে। 

আমরা এই বিষয়টা নিয়ে বিরক্ত হই, রাগ করি বা হাসাহাসি করি। আমরা বোধহয় ছোটবেলার সেই বন্ধুগুলোকে ভুলে গেছি যারা নিজেদের বিষয়ে বানিয়ে বানিয়ে বলতো; সরকারি করনীক বাবাকে এডিএম বা প্রাইমারি স্কুল টিচার মামাকে এসপি বানিয়ে নানান গল্প শোনাতো। এটাও এই ইম্পারোশেনসন ব্যাধীর আদি রূপ। 

ধরা পড়া জাল পরিচয়ধারীদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, এঁরা অর্থ তছরুপের উদ্দেশ্য রাখছেন না, কেবল সামাজিক প্রতিপত্তি প্রচারের উদ্দেশ্যেই ভুয়ো পরিচয় ধরে ঘুরে বেড়ান। 

আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি এই ইমপার্সোনেসন একটি সামাজিক ব্যাধি আর তার দায় আমাদের বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থার উপরেও যথেষ্ট বর্তায়।

আমি আমার শহরে সাধারণ যাত্রীদের রিক্সাওয়ালার সাথে ব্যবহার দেখেছি, আবার হল্যান্ডে ড্যাম স্কোয়ারে মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলেমেয়েদের পকেট মানির জন্য রিক্সা চালাতেও দেখেছি। আমি দেখেছি, প্যারিসের ক্লায়েন্ট অফিসে গারবেজ তোলার লোকটিকে অফিসের কর্মীদের সাথে গল্প করতে।

বেসরকারি চাকুরে যখন এমপ্লয়ি থেকে ম্যানেজার হবার বা ডিরেক্টর হবার ইঁদুর দৌড়ে নামে, আর তার কারণ যতক্ষণ অর্থকরী হয় ততক্ষণ আমার মতে তা স্বাভাবিক কিন্তু যে মুহুর্তে সোশ্যাল অপ্রেসনটা কোথাও কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেখানেই অসুস্থতা। 

কোম্পানির ডিরেক্টর হয়ে অধস্তনদের অপমান না করা অবধি নতুন পজিশনের উপলব্ধি হয়না, ম্যানেজার হবার পর স্টাফেদের নিজের পজিশন দেখিয়ে পায়ের নীচে না মারানো অবধি নতুন প্রমোশন বোঝাই যায়না; এগুলো সামাজিক ব্যাধি নয়? আমাদের বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা কোথাও কি কন্ট্রিবিউট করে না?

ভেবে দেখুন, কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে মনে হয়, ভুয়ো আইপিএস বা আই এ এস সাজলে দৈনন্দিন জীবনে অনেকগুলো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়! ভেবে দেখুন, পদ ও সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে পারস্পরিক সম্মান বা সৌহার্দ্য বাড়ালে এই ছদ্ম-পরিচয়ধারি-অপরাধীদের সংখ্যা কমতো কীনা!

প্রতিবেদন- স্নেহাশিস ব্যানার্জি


No comments