Header Ads

কবিতা পাঠেই জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বঙ্গতনয়া বৈশাখী সেন


শুধুমাত্র পেশা নয় মানুষ যে নেশাও অনেক কিছু করে তা আবারো একবার প্রমাণ করলেন বালুরঘাটের মহিলা আবৃত্তিকার বৈশাখী সেন। তার ফেসবুক পেজ 'কথা ও কবিতায় বৈশাখী' বয়স এখনো এক বছরও হয়নি, কিন্তু তার কবিতা আবৃত্তি জয় করেছে লক্ষ লক্ষ মানুষের মন। করোনা আবহে যখন সবাই ঘরবন্দি তখন বৈশাখী সোশ্যাল মিডিয়া কে সঙ্গী করে শুরু করলেন কবিতা আবৃত্তি। 


২০২০ সালের মে মাসের রবীন্দ্রজয়ন্তীতে রবি ঠাকুরের লেখা 'সাধারণ মেয়ে' কবিতাটি পাঠ করে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করেন। বন্ধুদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছিলেন তিনি। তারপর সেপ্টেম্বর মাসে তৈরি করেন নিজের ফেসবুক পেজ 'কথা ও কবিতায় বৈশাখী'। তার ফেসবুক পেজের প্রথম কবিতা মোহনা জাহ্নবীর লেখা 'আইডেন্টিটি ক্রাইসিস'। কয়েকদিন পর 'পুরুষ' নামক কবিতাটি পাঠ করে তিনি অনেক ভালোবাসা ও জনপ্রিয়তা পান। যে কবিতাটি কুড়ি ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় ১ মিলিয়ন ভিউ হয়ে যায়।  

বৈশাখীর মতে, "পুরুষ কবিতাটাই আমার টার্নিং পয়েন্ট।"

ফেসবুক পেজে এখন তার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ফলোয়ার্স, তবে কোনো কারণে পেজ থেকে কোনও রকম ইনকাম হয় না।সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ তার কবিতার মাধ্যমে নিজেকে মেলাতে পারেন। খুব সহজ সরলভাবে কবিতার মাধ্যমে একটা বার্তা দিতে চান, কখনো তিনি বলতে চেয়েছেন সব পুলিশ ঘুষ খায় না, আবার কখনও তিনি বলতে চেয়েছেন বর্তমানে শিক্ষকরা ইচ্ছে করে ঘরে বসে নেই। নিজের মতামত কবিতার মাধ্যমে উপস্থাপন করার জন্য অনেক বাজে মন্তব্যও শুনতে হয়েছে তাকে।

অনেক বন্ধু-বান্ধবও কখনো কখনো হাত ছেড়ে দিয়েছে তার। কিন্তু পিতৃহীন বৈশাখী তার মায়ের সাপোর্ট কে সঙ্গে করেই এগিয়ে চলেছেন।ছোটবেলা থেকেই তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেছেন, পুরস্কারও পেয়েছেন। কিন্তু কলেজে ওঠার পর থেকেই কবিতা আবৃত্তির ইচ্ছাটা আরো ভীষণভাবে জাঁকিয়ে বসলো তার। কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষক দিবসে তিনি উপস্থাপনা করেছিলেন আঞ্চলিক ভাষার কবিতা 'তেজ'। সেখানে অধ্যাপক অধ্যাপিকা এবং প্রিন্সিপাল এর কাছে  অনেক ভালোবাসা পান তিনি। বৈশাখী বলেছেন "আমার কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার ডক্টর পঙ্কজ কুন্ডু আমার কবিতা আবৃত্তি খুব পছন্দ করতেন, যে কোনো অনুষ্ঠানে আমাকে খোঁজ করতেন কবিতা আবৃত্তির জন্য, ওনার এই উৎসাহ আমাকে আরো অনুপ্রেরণা দিয়েছে।"

ছোটবেলা থেকে সেভাবে কখনো কবিতা আবৃত্তি না শিখলেও কখনো ফোনে কবিতাপাঠ শুনে বা সানডে সাসপেন্স উপস্থাপনার ভঙ্গিমা শুনে, এবং বেশ খানিকটা কলেজের বাংলার অধ্যাপিকা পৌষালী দাস মিত্র এবং ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে আবৃত্তি শিখে এখন সে দক্ষ।

বালুরঘাট কলেজ থেকে ২০১৯ সালে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হয়ে বর্তমানে বিএড করছেন এবং সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, নিজের হাত খরচের জন্য কয়েকটা টিউশনি পড়ান। ব্যস্ততা থাকলেও একটা নির্দিষ্ট সময় বার করে আবৃত্তির জন্য দেন। কবিতা আবৃত্তির পাশাপাশি বই পড়তে ও গাছ লাগাতে ভালোবাসেন তিনি।

আগামীদের জন্য লিটারেসি প্যারাডাইসকে তিনি জানান "যার যা প্যাশন আছে তা করো পড়াশোনার চাপ থাকলেও। একটু সময় বার করে নিজের ভালোবাসাকে দাও, আমি নিজেও তাই করি।"

প্রতিবেদন- পৌলমী হালদার


No comments