Header Ads

দেশের মধ্যে সরকারি স্কুলে পড়ার চাহিদায় প্রথম পশ্চিমবঙ্গ


"সরকারি স্কুলে পড়ে ছেলেমেয়েগুলোর কিচ্ছু হলো না। ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি করলে বোধহয় ছেলেমেয়েগুলোর কিছু হতো।" এমন কিছু কথা মাঝে মধ্যেই অভিভাবক বা অভিভাবিকাদের মুখে শোনা যায়, যেটা নিছকই ভুল কথা। কারণ সরকারি স্কুলে শিক্ষার মান যথেষ্ট উন্নত। একটু মন দিয়ে সঠিক ভাবে সরকারি স্কুলে কোনো ছাত্র বা ছাত্রী পড়াশুনো করলেই সে জীবনে উন্নতি করতে পারবে। সরকারি স্কুলে পড়ার খরচও অনেক কম। সরকারি স্কুল থাকার ফলে সব শ্রেণীর মানুষের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনোর সুযোগ পেয়ে থাকে। কিন্তু বেসরকারি স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য সবার থাকে না। বেসরকারি স্কুলে মাত্রাতিরিক্ত খরচ জোগানো সকলের পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার। শুধু অর্থের ব্যাপারই নয়, অনেক ব্যক্তি মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্যও তার ছেলেমেয়েকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করে।


সরকারি স্কুলে পড়াশুনা হয়না, এই যে একটা চিরপ্রচলিত কথা আমাদের বাঙালি সমাজে চলে এসেছে, এর পিছনে একটা পুঁজিবাদী ষড়যন্ত্র থাকে। কী সেই ষড়যন্ত্র সেসব বিশ্লেষণ না করলেও চলে। এখন দেখার বিষয় হলো সরকারি স্কুলে পড়াশুনা হয়না এ কথাটা কতটা অসত্য তার একটা ছোট্ট প্রমাণ দেওয়া যাক। আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মতো বহু মহান ব্যক্তি সরকারি স্কুলে পড়াশুনা করেই সফল বিজ্ঞানী  হয়েছিলেন। সফল বাঙালি পদার্থবিদ মণি ভৌমিকও পড়াশুনা করেছিলেন সরকারি স্কুলে। আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী বাংলা ভাষাতে বিজ্ঞানচর্চা করে বিখ্যাত হয়েছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসু হলপ করে বলেছেন "যাঁরা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা হয় না, তারা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না৷" বাংলার মাটিতে জন্মানো বেশিরভাগ মহাপুরুষ বাংলা ভাষাতে বিজ্ঞানচর্চার কথা বলেছেন। আর বাংলা ভাষাতে বিজ্ঞানচর্চা করতে হলে তাকে সরকারি স্কুলেই ভর্তি হতে হবে। অতএব সরকারি স্কুলের যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। যে প্রয়োজনীয়তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সবচেয়ে ভালো বোঝেন।  

সম্প্রতি ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট  ইনফরমেশন সিস্টেম অফ এডুকেশনের এক সমীক্ষায় জানা গেছে পশ্চিমবঙ্গের মাত্র  ৯.৭ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে বেসরকারি মাধ্যমে। গোটা দেশে যেখানে ২৫ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২ কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে বেসরকারি মাধ্যমে সেখানে শুধু ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যে ১ কোটি ৪৫ লক্ষ শিক্ষার্থীর মধ্যে কেবল ১৫ লক্ষ ৭ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে বেসরকারি মাধ্যমে। 

দেশের মধ্যে সরকারি স্কুলের চাহিদায় প্রথম পশ্চিমবঙ্গ। গত এক দশকে এ রাজ্যে সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১.৩ শতাংশ। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প যেমন কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজ সাথী, বিনা পয়সায় বইখাতা ও পোশাক-পরিচ্ছদ প্রদান এবং বিনামূল্যে শিক্ষাপ্রদানের জন্য বহু পরিবারের ছেলেমেয়েরা ভর্তি হচ্ছে সরকারি স্কুলে। সব শ্রেণীর মানুষ সহজেই তার ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাতে পারছে৷ এমনকি শিক্ষার হারও বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। লকডাউনের সময় দেখা যাচ্ছে বহু ছাত্র-ছাত্রী বেসরকারি স্কুল ছেড়ে সরকারি স্কুলে ভর্তি হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। 

পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যে রাজ্য সরকারি স্কুলে পড়াশুনা  করে কীভাবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায় তার পথ দেখাচ্ছে গোটা দেশকে। সরকারি স্কুলের মাধ্যমে মাতৃভাষার প্রসার ঘটে, সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রসার ঘটে, ইতিহাস, ভূগোল, সাধারণ জ্ঞান ও বিজ্ঞানে দক্ষ হওয়ার সবরকম সুযোগ থাকে সরকারি মাধ্যমে। যারা সরকারি স্কুলে পড়াশুনা করেছে বা করছে তারাই একমাত্র জানে সরকারি স্কুলে পড়ার আনন্দই আলাদা। দেশের মধ্যে সরকারি স্কুলে পড়ার চাহিদায় পশ্চিমবঙ্গের প্রথম হওয়ার ঘটনা সত্যিই গর্বের। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments