ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরে যৌথ আন্দোলন কমিটির ডাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি থাকছে মহাকুমা বনধ
উত্তপ্ত ত্রিপুরা। ক্ষোভ ফুঁসছে ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরের বাঙালিরা। বর্তমান ত্রিপুরা সরকার ও ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পাকাপাকিভাবে ব্রু-রিয়াং শরণার্থীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রু-রিয়াং শরণার্থীদের ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরে বসবাসের জন্য তাদের ত্রিপুরার ভোটার তালিকাতেও নথিভুক্ত করা হয়। এমনকি তাদের আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়।
কাঞ্চনপুরের বাঙালিরা ব্রু-রিয়াং শরণার্থীদের পুনর্বাসন দেওয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়৷ কাঞ্চনপুরের নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে বিভোর। তারা একাধিকবার প্রশাসনের দ্বারস্থও হয়েছে। তারা প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি জানিয়ে প্রশাসনের সাথে আলোচনাও চালিয়েছে।কিন্তু সেখানকার প্রশাসনকে নিরব থাকতে দেখা গেছে।
ত্রিপুরা সরকারের দ্বারস্থ হয়ে নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চের কোনো লাভ হয়নি তাই গত শনিবার থেকে অসম-আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে গণআন্দোলনের ডাক দেয় তারা। বাঙালির জনপ্লাবনে ফেটে পড়ে গোটা কাঞ্চনপুর। নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চের ডাকে বিক্ষোভে উত্তাল কাঞ্চনপুর। একইসঙ্গে জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটির ডাকে গোটা ত্রিপুরা জুড়ে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক বাইক র্যালি। নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ, জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটির মিলিত বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদে টনক নড়েছে ত্রিপুরার প্রশাসনের।
আন্দোলনকারীদের আন্দোলন থামানোর জন্য পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়। পুলিশের অকথ্য লাঠিচার্জে নয়জন বাঙালি যুবক জখম হয়। নারী-পুরুষ ও শিশু সকলেই আন্দোলন সামিল হয়। পুলিশ নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন শ্রীকান্ত দাশ নামের এক যুবক। পুলিশের এরকম দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্দোলন বৃহৎ থেকে বৃহত্তর আকার নিয়েছে।
কাঞ্চনপুরের বাঙালিদের মতে, মিজোরাম থেকে ১৯৯৭ সালে ত্রিপুরায় এসে ব্রু-রিয়াং উপজাতির লোকেরা বসবাস শুরু করে। মিজোরাম গোষ্ঠী সংঘর্ষের ফলপ্রসূত ৩৫০০০ রিয়াং উপজাতির লোকেরা রাজ্যছাড়া হয়ে ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরে আশ্রয় নেয়। তারপর থেকে ২৩ বছর ধরে বাঙালিদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে তারা। তাদের অত্যাচারে প্রায় ৫০০ বাঙালি পরিবার ঘরছাড়া হয়েছেন কাঞ্চনপুরে।
নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ ও যৌথ আন্দোলন কমিটির সাথে প্রশাসনের গত ২১ শে নভেম্বর একটি আলোচনা সভা হয়। এই আলোচনার পর যৌথ আন্দোলন কমিটি জাতীয় সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। তবে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহাকুমা বনধ অনিদিষ্টকালের জন্য জারি থাকবে।
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা


Post a Comment