Header Ads

ইংরেজিতে মহালয়া বানিয়ে বাঙালির নস্টালজিয়াকে গোটা বিশ্বের পৌঁছে দিলেন সুপ্রিয় সেনগুপ্ত


বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো। পুজোর সাতদিন আগে পিতৃপক্ষের অবসান ও মাতৃপক্ষের সূচনাতে মহালয়ার সকালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহালয়া শুনলে বাঙালির হৃদয় জড়িয়ে যায়। বাঙালির নস্টালজিয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই মহলয়া৷ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে আমরা যে মহালয়াটা শুনে থাকি তার রচয়িতা হলেন বাণীকুমার। 


শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বাণীকুমার রচিত মহালয়া প্রতি মহালয়ার ভোরে না বেজে উঠলে মনে হওয়ার উপক্রম নেই যে পুজো আসছে। এই মহালয়ার স্ক্রিপ্টের ওপর বহুবার মহালয়া নির্মিত হয়েছে। আগে টেলিভিশনে এই বিশেষ মহালয়াটি আমরা দেখতে পেতাম৷ বর্তমান অনলাইনের যুগে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলও নির্মাণ করছে বাণীকুমারের মহালয়া। এক্ষেত্রে সকলে সঙ্গীতশিল্পী পঙ্কজ মল্লিক পরিচালিত অরিজিনাল মহালয়ার গানগুলোকে ব্যবহার করে নতুন করে ভিডিও শ্যুট করে একটা মহালয়া দাঁড় করায়। কোনো সংস্থা নিজেরাও নতুন করে সবকিছু রেকর্ডিং করে মহালয়া তৈরি করে।  

এতোদিন পর্যন্ত আমরা বাংলাতে মহিষাসুরমর্দিনী শুনে এসেছি কিন্তু ইংরেজিতে কী কখনো মহিষাসুরমর্দিনী শুনেছি? নিশ্চয় আমরা কেউই শুনিনি। একই সুর ও তালে মহিষাসুরমর্দিনী ইংরেজি অনুবাদে তৈরি করা অসম্ভব। অথচ এই অসম্ভবকে নিমেষে সম্ভব করে দেখালেন বেতার শিল্পী সুপ্রিয় সেনগুপ্ত। তিনি মহিষাসুরমর্দিনী ইংরেজিতে অনুবাদ করে নির্মাণ করেছেন। কারিগরী কবিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে মুক্তি পেয়েছে এই মহালয়াটি। 

সুপ্রিয় সেনগুপ্ত এই মহালয়টির প্রসঙ্গে বলেন "আমি খুব ছোটোবেলা থেকেই চণ্ডীপাঠ করতে ভালোবাসতাম৷ আমাদের পাড়ার ক্লাব ও পাশ্ববর্তী করুণাময়ী কালীমন্দিরে আমি চণ্ডীপাঠ করতাম৷ আমার মা-জ্যেঠুরা আমাকে চণ্ডীপাঠের জন্য প্রচণ্ড উৎসাহ দিতেন৷ তারা বলেছিলেন যে এই যে মহালয়ার চণ্ডীপাঠ বা বীরেন্দ্রকৃষ্ণের গলার চণ্ডীপাঠ এটা তো সারাজীবন বাঙালির সাথে থাকবে। এটাকে না পরিবর্তন করে এটার ওপরই নতুন কোনো ভাবনাচিন্তা করো। এটাকে রিপিট বা রিমেক করে কোনো লাভ হবে না৷ কারণ বাঙালি আজীবন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়াই শুনতে ভালোবাসবেন, এটাই বাঙালির বিশ্বাস। কীভাবে নতুন কিছু চিন্তাভাবনা করা যায় এটা ভাবতে শুরু করলাম৷ আমি দেখলাম আমার যাদবপুরে পড়ার সময় যে বন্ধুরা আমার সঙ্গে পড়তো তাদের ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগ বাইরের দেশে থাকে। কেউ ইংল্যান্ড, কেউ অকল্যান্ড, কেউ নিউজিল্যান্ডে থাকে৷ তাদের কাছে আমাদের সংস্কৃতি দিন দিন হাস্যকর হয়ে উঠছে বলে শোনা যায়। তারা বুঝতেই চাইছে না যে আমাদের সংস্কৃতি কতটা রিচ৷ তারা বাংলা শব্দও ভালোভাবে বোঝেনা৷ ফলে তাদের মধ্যে আমাদের সংস্কৃতির রসটা কিছুতেই আস্বাদন করানো যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমি ভাবলাম যে এই মহালয়াটা যদি একই সুর ও লয়ে ইন্টারন্যাশনালি অনুবাদ করি তাহলে আমাদের সংস্কৃতির রসটা গোটা পৃথিবীর ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। 

যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বা বাণীকুমার বাঙালির কাছে বাংলা ভাষার মাধ্যমে পরিচিত হয়েছেন, তাদের একই সুর, দোলা ও লয়কে যদি ইংরেজিতে অনুবাদ করে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে আমার মায়ের স্বপ্ন পূরণ হবে। সেখান থেকেই এই চেষ্টাটার শুরু। প্রথম প্রথম কাজটা করার সময় মনে হচ্ছিল বেশ অসম্ভব একটি কাজ। কারণ একটা সম্পূর্ণ উল্টো ভাষা মানে অন্য একটা ভাষার মধ্যে এই সমস্ত মাত্রাগুলিকে ফেলা বেশ কঠিন কাজ। কিন্তু মায়ের আশীর্বাদ হোক বা অধ্যাবসায় সবকিছু মিলেমিশে কাজটি একটা রূপ পেল। সেটা শুনতেও বেশ  ভালো লাগছে। এটা শুনে আমার বন্ধুবান্ধব বা আপনাদের মতো অনেকে বলছেন যে কাজটি অসম্ভব ভালো হয়েছে।" 


প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments