Header Ads

উপমহাদেশের প্রথম বাঙালি মুসলিম নারী চিকিৎসককে শ্রদ্ধা জানালো গুগল ডুডল


বাঙালি তাঁকে মনে না রাখলেও তিনিই অবিভক্ত বাংলার প্রথম বাঙালি মুসলিম নারী চিকিৎসক। তিনি হলেন ডঃ জোহরা বেগম কাজী। গত ১৫ ই অক্টোবর ছিল তাঁর ১০৮ তম জন্মদিবস। তাঁকে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানালো গুগল ডুডল।


১৯১২ সালের ১৫ ই অক্টোবর ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজনানাগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রথিতযশা চিকিৎসক ডঃ জোহরা বেগম কাজী। তাঁর আদি পৈতৃক নিবাস ছিল  বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার কালাকিনি থানার গোপালপুর গ্রামে। তাঁর শৈশব-কৈশোর কাটে নিজের মানবতাবাদী পিতার আদর্শে মহাত্মা গান্ধী প্রতিষ্ঠিত সেবাশ্রম 'সেবাগ্রামে'। 

তাঁর প্রাথমিক জীবন শুরু হয় রাজনানগাঁওয়ের রানি সূর্যমুখী প্রতিষ্ঠিত 'পুত্রিশালা'য়। একজন মেধাবী ছাত্রী হিসেবে তিনি শৈশবকাল থেকেই প্রথম স্থান অধিকার করে সকল পর্যায়ের সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেন। প্রাথমিক জীবন শেষ করে তিনি ভর্তি হন রাজনানগাঁওয়ের 'বার্জিস মেমোরিয়াল' নামক একটি ইংরেজি মিশনারী স্কুলে। তারপর উচ্চশিক্ষা লাভ করেন আলীগড় মুসলিম গার্লস কলেজে। এরপর এমবিবিএস পড়ার জন্য ভর্তি হলেন এশিয়ার প্রথম নারীদের এমবিবিএস কলেজ দিল্লির লেডিহাডিং মেডিকেল কলেজ ফর উইমেনসে৷ ১৯৩৫ সালে এই কলেজ থেকে এমবিবিএস পরীক্ষা দিয়ে গোটা ভারতের মধ্যে প্রথম হন তিনি। যার জন্য তিনি সম্মানজনক 'ভাইসরয়' পদক অর্জন করেন।  

সেকেলে নারীদের পর্দা প্রথার মতো ভয়ংকর প্রথাতে বাড়িতে বন্দী রাখা হতো৷ মেয়েদের পড়াশোনা করে শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হতো না। মেয়েদের সবদিক থেকে বঞ্চিত রাখা হতো৷ ডঃ জোহরা বেগম কাজী সমাজের কুৎসিত প্রথাগুলো ভেঙ্গে উপমহাদেশের প্রথম বাঙালি মুসলিম চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত লাভ করেন৷ চিকিৎসার উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি লন্ডন পাড়ি দেন৷ সেখানে গিয়ে চিকিৎসাশাস্ত্রের সর্বোচ্চ ডিগ্রি  'এফআরসিওজি' লাভ করেন তিনি৷ স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যায় তিনি এক ও অদ্বিতীয় চিকিৎসক৷ স্ত্রীরোগের সমস্ত প্রচলিত কুসংস্কারকে ছিন্ন করে একজন কিংবদন্তি চিকিৎসক হিসেবে উপমহাদেশে নতুন সময়ের সূচনা করেছিলেন। 

দুই বাংলার বাঙালি মুসলিম নারীদের আজও অনুপ্রাণিত করে ডঃ জোহরা বেগম কাজীর অবদান৷ ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি চলে আসেন ঢাকাতে৷ ১৯৪৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে তিনি চিকিৎসার কাজ আরম্ভ করেন৷ এখানে কর্মরত থাকাকালীন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসাপাতালে তিনি সাম্মানিক কর্নেল হিসেবে দায়িত্ব সামলেছিলেন। ২০০২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ তাঁকে 'বেগম রোকেয়া পদক' প্রদান করে। ২০০৮ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ সরকার তাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মান 'একুশে পদক' (মরণোত্তর) প্রদান করে। ডঃ জোহরা বেগম কাজীকে গোটা বিশ্বে বলা হয় 'ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল অফ ঢাকা'। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments