Header Ads

জৈব পদ্ধতিতে ধান চাষ করে দিশা দেখাচ্ছে উত্তরবঙ্গের একদল মহিলা


"কাজে কীসের লাজ হোকনা যেমন কাজ।" প্রতিটি কাজই সমাজে সমান গুরুত্বপূর্ণ। কাজের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজের বড়ো সমস্যা হলো লিঙ্গ বৈষম্য। পুরুষ কাজ করলে ঠিক আছে কিন্তু মহিলারা কাজ করলে সেটা যেন সমাজ মেনে নিতে পারেনা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না একটা রাজ্য বা দেশের উন্নতি তখনই সম্ভব যখন সেই দেশের পুরুষ ও নারী উভয় শ্রেণীই সমস্ত কাজ করবে। 


বর্তমান সময়ে বাংলার নারীসমাজ স্বনির্ভর হওয়ার দিকে বিশেষভাবে এগোচ্ছে। আজকের এই প্রতিবেদনে এমনই দুটো মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কথা তুলে ধরতে চলেছি যারা জৈব পদ্ধতিতে ধান চাষ করে বাংলার কৃষিকাজকে নতুন পথ দেখাচ্ছে। উত্তরবঙ্গের একদল মহিলা নিজস্ব উদ্যোগে এই কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।  

যুগ আধুনিক হওয়ার সাথে সাথে বেড়েছে রাসায়নিক সার ও ফার্টিলাইজারের ব্যবহার। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও ফার্টিলাইজার ব্যবহারের ফলে কৃষিজাত পণ্যের গুণগত মান হ্রাস পাচ্ছে এবং মৃত্তিকা ও জলদূষণ বাড়ছে। জৈব পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করার প্রবণতা যখন দিন দিন কমে আসছিল সেখানে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে সুফল পাচ্ছেন শিলিগুড়ি মহাকুমার শিবমন্দিরের নিকটবর্তী  আঠারখাই গ্রাম পঞ্চায়েতের রঙ্গিয়া-বাতলাবাড়ি এলাকার বিজয়া ও সাথী নামের দুটো মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী। 

সম্পূর্ণ অরগ্যানিক বা জৈব পদ্ধতিতে ধান চাষ করছেন ঐ মহিলারা। প্রথমে তারা ধান বীজ সংগ্রহ করে তা শোধন করছেন। তারপর জমিতে সেই বীজ রোপণ করে তার ওপর অনু খাদ্য স্প্রে করছেন। উন্নতমানের ফলন সহ মোটা রোজগারের সুযোগ পাচ্ছেন তারা। রাজ্যের কৃষি দপ্তর থেকেও তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রায় পনেরো বিঘা জমিতে সুন্দরী কেরালা নামের একপ্রকার ধান চাষ করছেন তারা। 

কেবল বিজয়া গোষ্ঠীই নয়, সাথী নামের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীও ধান চাষ করছে। তারা প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা প্রথম পর্যায়ে কড়ক মুরগি চাষ শুরু করেন। এই প্রকার মুরগি সাধারণত ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হয়। কড়ক মুরগি চাষে সাফল্য পাওয়ার পর থেকেই তাদের ধান চাষের যাত্রা শুরু। বহুরূপী, কালো ধান, ছোটো নুনিয়া, বাহুবলীর মতো ছয় রকমের ধান চাষ হচ্ছে তাদের ১৮ বিঘা জমিতে। রাজ্য কৃষিদপ্তর থেকে তাদের বীজ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বালাসন ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প থেকে ট্রাক্টরের সাহায্য পাচ্ছেন তারা৷ 

বিজয়া গোষ্ঠী জৈবিক উপায়ে  মাশরুম ফলন করে সাফল্য পাওয়ার পর ১৫ বিঘা জমিতে সুন্দরী কেরালা নামের এক প্রকার ধান চাষ করছেন। বিজয়া ও সাথী নামের এই দুটো মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ধান চাষে বাংলাকে সঠিক উপায়ে অধিক রোজগারের আশা দেখাচ্ছে। জৈবিক পদ্ধতিতে চাষ করলে ফসলের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশেরও উপকার হয়। পরিবেশ বান্ধব এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে বিজয়া গোষ্ঠী ও সাথী গোষ্ঠী যেভাবে সাফল্য অর্জন করেছে তাতে এদেরকে অনুসরণ করে তৈরি হবে আরো অসংখ্য স্বনির্ভর গোষ্ঠী। এতে করে বাংলার বুকে তৈরি হবে নব কৃষিবিপ্লব। 

প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা

No comments