Header Ads

জটায়ুর পাখি পরিচিতি, বাঙালি পক্ষীবিদ অজয় হোম ও সত্যজিৎ রায়


জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা গল্পে ফেলুদা ও জটায়ু পানিহাটিতে যান। কিন্তু ঐ সময় ওনাদের ড্রাইভার দশদিন ছুটিতে চলে যান, ফলে ফেলুদাকেই গাড়ি চালানোর দায়িত্বটা নিতে হল। তখন রাস্তায় যাওয়ার পথে জটায়ুকে একটি বাইনোকুলার এবং দুটি বই দেন। এই বই দুটো হল সেলিম আলির 'ইন্ডিয়ান বার্ডস' আর অজয় হোমের 'বাংলার পাখি'।


বাঙালি পক্ষীবিদ অজয় হোমের সাথে সত্যজিৎ রায়ের ছিল ঘনিষ্ট যোগাযোগ। অজয় হোম এবং সেলিম আলিকে শ্রদ্ধা জানাতেই তিনি জটায়ুর সাথে এই প্লটটি জুড়ে দেন। 'বাংলার পাখি' বইটি সত্যজিৎ রায়ের অত্যন্ত ভালো লেগে যায়। যে কারণে তিনি এই বইটির প্রচ্ছদও করেন নিজের আগ্রহে।

আমরা জীবনানন্দ দাশ বা বাংলার অন্যান্য কবিদের বইতে বিভিন্ন রকম বাংলার পাখির পরিচয় পেয়ে থাকি। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে যদি বাংলার পাখিদের জগৎ জানতে চাই তাহলে যে মানুষটার শরণাপন্ন হতে হবে তিনি হলেন স্বনামধন্য পক্ষীবিদ অজয় হোম। অজয় হোম 'বার্ডম্যান অফ বেঙ্গল' নামেও পরিচিত। সেলিম আলি, স্যামুয়েল টিকল, মেজর ফ্র্যাঙ্কলিনের সারির পক্ষীবিদ ছিলেন তিনি। বাংলা ভাষায় বাংলার পাখি সম্পর্কে জানতে অজয় হোমের বইগুলোর জুড়ি মেলা ভার।

বাংলা ভাষায় প্রকৃতিবিজ্ঞানের পথিকৃৎ ছিলেন অজয় হোম। ওনার লেখা বইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল 'বাংলার পাখি', 'চেনা অচেনা পাখি', 'বিচিত্র জীব-জন্তু', 'মরণ ঘুম'। প্রায় চল্লিশ বছরের পাখি সম্পর্কে ওনার গবেষণা বইগুলিকে করে তুলেছে দুর্লভ। দুই বাংলা, সুন্দরবন ও আসামের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি পাখি গবেষণা করতেন। এছাড়াও তিনি আলিপুর চিড়িয়াখানায় শিম্পাঞ্জিকে মাঝে মাঝে দুধ খাওয়াতেন। এমনকি মাঝে মধ্যে বাঘেদের সঙ্গে আপন মনে খেলা করতেন। সন্দেশ, দেশ, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, আজকাল, মহানগরের মতো বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেছেন। ওনার লেখা ছিল কল্পবিজ্ঞানমূলক বই হলো মরণ ঘুম’। 

বিখ্যাত বিজ্ঞানী প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশের অনুরোধে তিনি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট কলকাতার লাইব্রেরিয়ান হন। বাংলার পাখি ও চেনা অচেনা পাখি এই দুটি গ্রন্থের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে (মরণোত্তর) রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে তিনি পেয়েছেন অর্চনা পুরস্কার। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে অজয় হোমের অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে সায়েন্স এডুকেশন অফ বেঙ্গল ওনাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করে। 

বাংলার প্রকৃতি সম্পর্কে গবেষণার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রকৃতি সংসদ। প্রকৃতি জ্ঞান নামে একটি পত্রিকাও তিনি প্রকাশ করতেন নিজের উদ্যোগে। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ওনার জন্ম সার্ধশতবার্ষিকীতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ২০১৩ সালে। প্রেমেন্দ্র মিত্র, লীলা মজুমদার, কালিদাস নাগের মতো সাহিত্যিক ওনার লেখার প্রশংসা করেছেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় সেলিম আলির সারির পক্ষীবিশারদ হয়েও তিনি বিস্মৃতির আড়ালে থেকে গেছেন। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মতো অজয় হোমের অবদানও অবিস্মরণীয়।

প্রতিবেদন- অমিত দে


No comments